কওমী মাদরাসার পরিচয় ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

কওমি মাদরাসা

‘কওমী মাদরাসা’ এক বিশেষ ধরণের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভারতে অবস্থিত দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসার মাধ্যমে কওমী ধারার শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে দেওবন্দ মাদরাসার অনুকরণে ভারত উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অসংখ্য কওমী মাদরাসা।

দারুল উলূম দেওবন্দ
দারুল উলূম দেওবন্দ। ছবিঃ কামরুল ইসলাম।

 

‘কওমী’ শব্দের অর্থ জাতীয়। ‘মাদরাসা’ শব্দের অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ, ‘কওমী মাদরাসা’ এর অর্থ হল জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেহেতু কওমী ধারার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারী অনুদানের পরিবর্তে মুসলিম কওমের (জাতির) অনুদানে পরিচালিত হয়, তাই এই ধারার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসমূহকে ‘কওমী মাদরাসা’ বলা হয়ে থাকে।

 

কওমী মাদরাসাসমূহকে ‘খারেজী মাদরাসা’ও বলা হত একসময়। ‘খারেজী’ শব্দের অর্থ বহির্ভূত। যেহেতু কওমী মাদরাসাসমূহ সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে ছিল, তাই কওমী মাদরাসাসমূহে বলা হত ‘খারেজী মাদরাসা’। দারুল উলূম দেওবন্দের অনুকরণে পরিচালিত বিধায় অনেক স্থানে কওমী মাদরাসাসমূহকে ‘দেওবন্দী মাদরাসা’ এবং ‘দারুল উলূম মাদরাসা’ও বলা হয়।

দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৬৬ সালে। এটিই ছিল কওমী ধারার প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমন এক সময়ে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়, যখন ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরা অতিক্রম করছিল এক ভয়াবহ ক্রান্তিকাল। ইংরেজদের হাতে জিম্মি হয়ে ছিল গোটা উপমহাদেশ। পলাশি যুদ্ধের পর ষড়যন্ত্র এবং কুটকৌশলের মাধ্যমে ইংরেজরা ছিনিয়ে নিয়েছিল উপমহাদেশের এক একটি রাজ্যের স্বাধীনতা।

ভারতবর্ষ ম্যাপ
ভারতবর্ষের মানচিত্র। বামের মানচিত্রটি ১৭৬৫ সালের এবং ডানের মানচিত্রটি ১৮০৫ সালের। ইংরেজদের দখলকৃত রাজ্যগুলোকে হালকা গোলাপি রং দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। – ছবিঃ উইকিপিডিয়া।

 

ভারতবর্ষ
ভারতবর্ষের মানচিত্র। বামের মানচিত্রটি ১৮৩৭ সালের এবং ডানের মানচিত্রটি ১৮৫৭ সালের। ইংরেজদের দখলকৃত রাজ্যগুলোকে হালকা গোলাপি রং দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। ছবিঃ উইকিপিডিয়া।

১৮০৩ সালে দিল্লির শাসনক্ষমতাও দখল করে নেয় ইংরেজরা। দিল্লির প্রশাসনিক কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, “এখন থেকে ভারতের প্রশাসনিক নীতি হবে এই যে, ‘সৃষ্টি আল্লাহ্‌র, সাম্রাজ্য সম্রাটের আর হুকুম চলবে কোম্পানির’।” এই ঘোষণার পর দিল্লির হাদীসের কেন্দ্র থেকে শাহ আব্দুল আজীজ দেহলভী রহ.-ও ঘোষণা করেন, “এখন থেকে ভারত ‘দারুল হরব’ (তথা শত্রু কবলিত এলাকা হিসেবে বিবেচিত হবে) এবং ভারতকে শত্রু (ইংরেজ) মুক্ত করার জন্য লড়াই করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরজ। শাহ আব্দুল আজিজ রহ. ছিলেন সে যুগের শ্রেষ্ঠ আলেমদের একজন। তার আরো একটি বড় পরিচয় হল তিনি ছিলেন জগদ্বিখ্যাত আলেম ও বুজুর্গ হযরত শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি রহ.-এর সন্তান। নিজ যোগ্যতা ও পিতৃপরিচয়ের কারণে মুসলমান সমাজে তাঁর প্রভাব ছিল অপরিসীম। তাই তাঁর ‘দারুল হরব’ ফতোয়ার ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। শত্রুমুক্ত করে দেশকে স্বাধীন করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে মুসলমানদের মনে।

 

হযরত শাহ আব্দুল আযীয রহ. এর শিষ্য ও খলিফা ছিলেন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহ.। ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজদের বিতাড়িত করা এবং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি একটি মুজাহিদ বাহিনী গঠন করেন। এ বাহিনীতে তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন শাহ আব্দুল আজিজ রহ. এর জামাতা মাওলানা আব্দুল হাই রহ এবং ভাতিজা শাহ ইসমাইল শহীদ রহ.।  অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যোগ দিয়েছিলেন এ বাহিনীতে। প্রায় অর্ধ যুগ জিহাদের ময়দানে লড়াইরত ছিল এ বাহিনী। ১৮৩১ সালে বালাকোটের প্রান্তরে মুজাহিদ বাহিনী ও ইংরেজদের দোসর শিখদের মাঝে তুমুল লড়াই সংঘটিত হয়। এ লড়াইয়ে শাহাদাতবরণ করেন সাইয়্যিদ আহমদ বেরলভি রহ.। শাহাদাতবরণ করেন শাহ ইসমাইল রহ. সহ অসংখ্য উলামায়ে কেরাম। কিন্তু এত এত শাহাদাতের ঘটনার পরেও আলেমদের মন থেকে মোছা যায়নি স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা; যার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময়।

বালাকোট
বালাকোটের সন্ধ্যাকালীন দৃশ্য। এটি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের একটি শহর। – ছবিঃ উইকিপিডিয়া।

 

শাহ্‌ ইসমাইল শহীদ
বালাকোটে শাহ্‌ ইসমাইল শহীদ রহ.-এর কবর। -ছবিঃ উইকিমিডিয়া।

১৮৫৭ সালে ভারত উপমহাদেশজুড়ে সংঘটিত হয়েছিল এক মহা বিদ্রোহ; ইতিহাসের পাতায় যেটি ‘সিপাহী বিদ্রোহ’ নামেই অধিক পরিচিত। উপমহাদেশের অনেকে তখন ইংরেজদের অধীনে সিপাহী হিসেবে কাজ করত। বিভিন্ন কারণে ইংরেজদের উপর ক্ষোভ ছিল ছিল এই দেশীয় সিপাহীদের। এ ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে ১৮৫৭ সালে যখন তাদেরকে রাইফেলের জন্য এক নতুন ধরণের টোটা ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। এই টোটায় গরু ও শুকরের চর্বি মিশ্রিত ছিল। এটি দাত দিয়ে ছিঁড়তে হত। উল্লেখ্য যে, মুসলমানদের কাছে শুকর হারাম আর হিন্দুদের কাছে গরু দেবতা। ফলে এই টোটা ব্যবহারে দেশীয় মুসলিম ও হিন্দু সিপাহীরা অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়েই উত্তেজনার এক পর্যায়ে বিদ্রোহ করে সিপাহীরা।

 

সিপাহীদের দ্বারা শুরু হওয়া এই বিদ্রোহে যুক্ত হয়েছিলেন এদেশের মুক্তিকামী সকল জনতা। অংশ নিয়েছিলেন স্বাধীনতাকামী ওলামারাও। শামেলির ময়দানে ইংরেজদের একটি বাহিনীকে পরাজিত করেন ওলামায়ে কেরাম। থানাভবনকে কেন্দ্র করে একটি এলাকাকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণা দেওয়া হয় একটি অস্থায়ী সরকারেরও। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হয়ে যায় বিদ্রোহ। মুক্তিকামী ওলামায়ে কেরাম ও সিপাহী-জনতার উপর নেমে আসে নির্যাতনের স্টিম রোলার। গ্রেফতার করে নির্বাসনে পাঠানো হয় নেতৃস্থানীয় অসংখ্য ওলামায়ে কেরামকে। প্রায় অর্ধ লক্ষ আলেমকে হত্যা করে ইংরেজরা। আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে তাঁদের লাশ ঝুলিয়ে দেয় রাস্তার পাশে থাকা গাছের ডালে এবং জনবহুল হাটবাজারে।

সিপাহী বিদ্রোহ
১৮৫৭ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার অপরাধে দু’জনকে ফাঁসি দেওয়া হছে। -ছবিঃ উইকিপিডিয়া।

 

ইংরেজরা মুসলমানদের থেকেই ছিনিয়ে নিয়েছিল উপমহাদেশের শাসনক্ষমতা। তাদের বিরুদ্ধে অধিকাংশ বিদ্রোহও সংঘটিত হয়েছিল মুসলমানদের দ্বারা। তাই মুসলমানদেরকেই প্রধান শত্রু ভাবত তারা। মুসলমানদের ক্ষতি সাধনের জন্য এমন কোন হীনপন্থা নেই যা তারা ব্যবহার করেনি। মুসলমানরা তখনো ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে এগিয়ে ছিল। আর এ এগিয়ে থাকার মূল কারণ ছিল মাদরাসাকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা। তাই বিভিন্ন কূটকৌশলে মাদরাসা শিক্ষাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় ইংরেজরা।

প্রাচীন মাদরাসা
চতুর্দশ শতকে তৈরি একটি প্রাচীন মাদরাসা। এখানেই শায়িত আছেন মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠাতা দিল্লির সুলতান আলাউদ্দীন খিলজি। – ছবিঃ উইকিপিডিয়া।

ইংরেজদের পূর্বে এ দেশে শুধু ধর্মভিত্তিক শিক্ষাই চালু ছিল। মুসলমানরা পড়াশুনা করতেন মাদরাসায়। যেহেতু মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ইসলামী আইন ও ফার্সি ভাষায় পারদর্শী ছিল, তাই বিচারকের দায়িত্ব ও রাজ দরবারের দায়িত্বগুলো পেতেন মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ইংরেজরা এসে রাজ দরবারে ফার্সির পরিবর্তে ইংরেজি ভাষা চালু করে। ইসলামী আইনের পরিবর্তে চালু করে তাদের নিজস্ব আইন। ফলে বেকার হয়ে পড়েন সেই সময়কার মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। শুধু এটুকুই না, সেই সময় মাদরাসাগুলোর আয়ের উৎস যে লাখেরাজ ভূমিগুলো ছিল, সেগুলোও বাজেয়াপ্ত করে ইংরেজরা। ফলে অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায় অনেক মাদরাসা । এত শত বাঁধার পরেও যে মাদরাসাগুলো টিকে ছিল, সিপাহী বিদ্রোহের পর জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয় সেগুলোও। এভাবে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে তারা চালু করে নতুন এক শিক্ষা ব্যবস্থা। যে শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী জ্ঞান লাভের সুযোগ ছিল না, যে শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজদের সেবাদাস তৈরি করা। এমন একটি গোষ্ঠী তৈরি করা যারা রক্ত ও বর্ণে ভারতীয় হলে মন-মানসিকতার দিক দিয়ে হবে খাটি ইউরোপিয়ান তথা খ্রিস্টান।

 

একদিকে স্বাধীনতার সংগ্রামে হাজার হাজার আলেম শাহাদাত বরণ করেছিলেন। অপরদিকে ইংরেজদের কূটকৌশলে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তির সংখ্যা এত হ্রাস পেয়েছিল যে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেও এমন কাউকে পাওয়া যেত না যিনি জানাযার নামায পড়ানোর নিয়ম জানেন। তাই উম্মাহের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন সে যুগের ওলামায়ে কেরাম। ইসলামী শিক্ষার অভাবে মুসলিম জাতি তাদের ধর্মীয় পরিচয় হারিয়ে ফেলবে, এমনটাই আশংকা করছিলেন তারা। ওলামায়ে কেরাম চিন্তা করলেন, আপাতত স্থগিত রাখা হবে স্বাধীনতার লড়াই। জোর দেওয়া হবে ইসলামী শিক্ষার সংরক্ষণ ও প্রচার-প্রসারে। যেন ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আলো নিভে না যায়। যেন মুসলমানরা ইসলামী শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়। রক্ষা পায় তাদের ধর্মীয় পরম্পরা, ধর্মীয় পরিচয়।

*বিজ্ঞাপন

হাফেজ মাদানি নেসাব

 

 

মুসলিম উম্মাহের তৎকালীন অবস্থার কারণে ব্যথিত এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত এমন একজন আলেম ছিলেন হযরত কাসেম নানুতুবী রহ.। তাঁর শ্বশুরবাড়ি ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ নামক এলাকায়। সেখানে গেলে স্থানীয় সাত্তা মসজিদে নামায আদায় করতেন তিনি। নামায শেষে সাত্তা মসজিদের ইমাম হাজী আবেদ হুসাইন রহ.-এর কামরায় বসতেন। স্থানীয় আলেমরাও থাকতেন সেখানে। তারা কথা বলতেন, সেই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে। পরামর্শ করতেন মাদরাসা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে। এভাবেই চলে যায় কয়েক বছর। অবশেষে ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি মাদরাসা। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে মাদরাসাটির নাম ছিল ‘আরবী মাদরাসা’, যেটি এখন সবার নিকট পরিচিত দারুল উলুম দেওবন্দ নামে।  সাত্তা মসজিদের ইমাম আবেদ হুসাইন রহ. এর সহায়তায় এবং স্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অর্থায়নে কাসেম নানুতুবি রহ. প্রতিষ্ঠা করেন মাদরাসাটি। সাত্তা মসজিদের বারান্দায় এক ডালিম গাছের নিচে একজন শিক্ষক এবং একজন ছাত্রকে নিয়ে শুরু হয় মাদরাসার পাঠদান। সূচনালগ্নের সেই প্রথম শিক্ষক ছিলেন মোল্লা মাহমুদ রহ. এবং ছাত্র ছিলেন মাহমুদুল হাসান রহ.।

সাত্তা মসজিদ
সাত্তা মসজিদের বাহিরের অংশের বর্তমান অবস্থা। ছবিঃ কামরুল ইসলাম।

দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠা কাসেম নানুতুবী রহ. শিক্ষাজীবনে যাদের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে দুইজন ছিলেন শাহ আব্দুল গনী মুজাদ্দেদ রহ. এবং মাওলানা মামলুক আলী রহ.। তাঁরা উভয়ে ছিলেন শাহ ইসহাক রহ. এর শাগরিদ। শাহ ইসহাক রহ. ছিলেন শাহ আব্দুল আজিজ রহ. বিশিষ্ট শাগরিদ এবং দৌহিত্র। শাহ আব্দুল আজিজ হলেন সেই ব্যক্তি যিনি ‘দারুল হরব’ ঘোষণা করে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন এবং ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজদের বিতাড়িত করাকে ফরজ বলেছিলেন। এভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে কাসেম নানুতুবী রহ. পেয়েছিলেন স্বাধীনতার চেতনা। দেখতেন ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজদের বিতাড়িত করার স্বপ্ন। এ কারণেই সিপাহী বিদ্রোহের সময় অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। একটি মুজাহিদ বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে শামেলির ময়দানে পরাজিত করেছিলেন ইংরেজদের একটি বাহিনীকে। মূলত নিরাপদ আশ্রয়ের আড়ালে তিনি দেওবন্দ মাদরাসাকে বানিয়েছিলেন স্বাধীনতার চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার কেন্দ্র। ফলে এখানেই গড়ে ওঠেছেন শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান রহ. , হুসাইন আহমেদ মাদানী রহ., মাওলানা ভাসানীর মতো স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক মহানায়ক। যারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ভয়ংকর দ্বীপে নির্বাসিত হয়েছেন। যাদের ত্যাগের ফলেই উপমহাদেশ ইংরেজমুক্ত হয়েছে। স্বাধীন হয়েছে এই ভারতবর্ষ।

শাইখুল হিন্দ লাইব্রেরী, দেওবন্দ
দেওবন্দ মাদরাসায় নির্মাণাধীন দারুল হাদীস ও শাইখুল হিন্দ লাইব্রেরি। দেওবন্দ মাদরাসার প্রথম ছাত্র ও ভারতবর্ষের স্বাধীনতার অগ্রনায়ক শাইখুল হিন্দ রহ.-এর নামে এ লাইব্রেরির নামকরণ করা হয়েছে। – ছবিঃ কামরুল ইসলাম।

দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল দুইটি। ইসলামী শিক্ষার সংরক্ষণ ও প্রচার-প্রসার এবং স্বাধীনতার চেতনা ছড়িয়ে দেওয়া। তাই এখানে শিক্ষার্থীদের বলা হত, পড়াশুনা শেষ হলে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যেতে। ফিরে গিয়ে দেওবন্দ মাদরাসার অনুকরণে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে। তৈরি করতে এমন কিছু মানুষ যারা ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রাসারে নিজের জীবন বিলিয়ে দিবে। ইসলাম ও স্বদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে যারা হবে অগ্রগামী। এই লক্ষ্য দু’টোকে সামনে রেখে দেওবন্দ থেকে পাশ করা ছাত্ররা ছড়িয়ে পড়েন সারা বিশ্বে। প্রতিষ্ঠা করেন শত শত মাদরাসা। এই শত শত থেকে তৈরি হয়েছে হাজার হাজার মাদরাসা। দেওবন্দের অনুকরণে প্রতিষ্ঠিত এ সকল মাদরাসাকেই বাংলাদেশে বলা হয় ‘কওমী মাদরাসা’।

Facebook Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *