অহংকার

অহংকার থেকে বাঁচার উপায়

মানুষের দেহে যেমন রোগ হয়, তেমন রোগ হয় তার অন্তরেও।
দেহের রোগ হলে আমরা চিকিৎসা নেই। আমরা চেষ্টা করি যেন দেহের রোগ থেকে বেঁচে থাকতে পারি। কিন্তু অন্তরের রোগ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের তেমন কোনো প্রচেষ্টা নেই। অথচ দেহের রোগ হলে কেউ যদি সবর করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা এর দ্বারা তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। কিন্তু অন্তরের রোগ যদি দূর না হয় তাহলে মানুষের দুনিয়া আখেরাত উভয়টাই বরবাদ হয়ে যায়। মানুষ তো আকারে তখন মানুষ থাকে কিন্তু প্রকারে সে আর মানুষ থাকে না। সে যতই শিক্ষিত বা ধনী হোক না কেন। তাই এই অন্তরের রোগগুলো দূর করে আখলাকে হাসানার (উত্তম স্বভাব-চরিত্র) অর্জনের মাধ্যমে আমাদের প্রকৃত মানুষ হতে হবে।
অন্তরের যে রোগগুলো রয়েছে তার মধ্যে বড় একটি রোগ হল অহংকার। এটা অনেক বড় একটা রোগ যার থেকে বাঁচার জন্য কোরআন-হাদীসে অনেকবার আদেশ দেওয়া হয়েছে। অহংকার করার অধিকার শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার। কিন্তু যে বান্দা, আল্লাহর গোলাম, তার তো কোন অধিকার নেই অহংকার করার।
এখন এই অহংকারের রোগ আমাদের থেকে আপনাআপনি দূর হবে না। এই রোগ দূর করতে চিকিৎসা লাগবে, চেষ্টা লাগবে।
অহংকার দূর করতে আমাদের যা যা করা লাগবে।
১. নিজের দোষকে এবং অপরের গুণকে সামনে রাখা। এতে অন্তরের মধ্যে বিনয় সৃষ্টি হয় এবং অহংকার দূর হয়।
২. মানুষের মনে অহংকার আসে আল্লাহর কোন নিয়ামত পেয়ে। যেমন, কোন ব্যক্তি সুন্দর, ধনী, মেধাবী ইত্যাদি কারণে তার মনে অহংকার তৈরি হয়। তাই অহংকার আসলে এই চিন্তা করা যে, আমি যেই বিষয়গুলো নিয়ে অহংকার করছি সেগুলো তো আল্লাহর নেয়ামত। আল্লাহ চাইলেই এই নেয়ামত আমার থেকে থেকে ছিনিয়ে নিতে পারেন। তাই এ সমস্ত নেয়ামত লাভের কারণে আমার অহংকারের কিছুই নেই।
৩. নিজের শুরু এবং শেষ পরিণতি নিয়ে চিন্তা করা। যে আমি তো এক ফোঁটা নাপাক পানি থেকে তৈরি এবং আমার পরিণতিও মাটির নীচে। যে মাটি থাকে সবার পায়ের নীচে। তাহলে কীসের ভিত্তিতে এত অহংকার করি?
৪. ছোট ছোট কাজকেও ছোট মনে না করে সেগুলো করার চেষ্টা করা। যেমন, স্ত্রীর কাজে সহায়তা করা, কোথাও কিছু আনতে গেলাম তো সেটা অন্যের হাতে না দিয়ে নিজের হাতে বহন করা ইত্যাদি।
৫. যদিও কোন কাজ ছোট না, কোন পেশাকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। কিন্তু বর্তমান সমাজে অনেক পেশাকে ছোট করে দেখা হয়। অহংকার কমানোর একটা উপায় হল এই সমস্ত পেশার লোকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। তাদেরকে সালাম দেওয়া।
৬. আল্লাহর নেয়ামত পেয়ে শুকরিয়া আদায় করা। তাহলে আর মনে অহংকার আসবে না।

১৭/১১/২০১৭ ইসায়ী রোজ বৃহস্পতিবার মাগরিবের পর খাস তরবিয়াতি মজলিসে কথাগুলো বলেছিলেন প্রিয় উস্তাদ এবং প্রিয় মানুষ মাওলানা আবু সাবের আব্দুল্লাহ হাফিযাহুল্লাহ। অনেক সুন্দরভাবে কোরআন হাদীসের দলীল উল্লেখ করে করে কথাগুলো বলছিলেন তিনি। নিজের কাছে কথাগুলো সংরক্ষণের জন্যই সংক্ষেপে নিজের মত করে লিখাগুলো লিখে রাখা। তবে যারা লেখাটি পড়বেন তারাও উপকৃত হবেন আশা করি।

Facebook Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *